আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে এআই ব্যবহারে মিথ্যা তথ্যের ঝড় উঠার শঙ্কা!

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের ঝড় উঠার শঙ্কা উঠেছে।

গত মাসে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি সান্তিসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারনায় টুইটারে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ড. অ্যান্থনি ফৌসিকে আলিঙ্গন করছেন। ধারণা করা হচ্ছে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। দেশের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞকে বরখাস্ত না করার জন্য ট্রাম্পকে সমালোচনা করতেই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বাস্তব ছবির পাশাপাশি এই জুটির বানানো ছবিটিও প্রকাশ করা হয় এবং সেখানে লেখা হয় ‘বাস্তব জীবন ট্রাম্প।’

ছবিটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো এবং গভীর পর্যবেক্ষণসক্ষম ব্যক্তিরা তা দ্রুত শনাক্ত করে ফেলে। কিন্তু বিপুল পরিমান কর্মী ছাঁটাই করা নতুন মালিকানাধীন টুইটার ভিডিওটি সরায় নি। এর পরিবর্তে বরং ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে একটি কমিউনিটি নোট লিখেন যেখানে বলা ছিলো ‘তিনটি ছবির যেটায় ফৌসিকে ট্রাম্পের আলিঙ্গন করতে দেখা গিয়েছে তা মূলত এআই মাধ্যমে সৃষ্ট।’

Techshohor Youtube

ডিজিটাল তথ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের বিভ্রান্ত বা দিকভ্রান্ত করতে এআই এর মাধ্যমে সৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহারের এটি সূচনামাত্র। এআই টুলসের নতুন সক্ষমতা হচ্ছে আকর্ষণীয়ভাবে পাঠ্য এবং বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করা। ক্রমে এভাবে ভিডিও এবং অডিও তৈরি করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা এমনকি এআই কোম্পানিতে কর্মরত বেশ কয়েকজন নির্বাহি কর্মকর্তাও বলেছেন, ২০২৪ সালে মার্কিন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই টুলগুলো ব্যবহার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন এবং সেন্টার ফর ইনফরমড পাবলিকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেভিন ওয়েস্ট বলেছেন, ‘প্রচারনা কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে, নির্বাচনও সামনে এগিয়ে আসছে এবং প্রযুক্তি আরো দ্রুত উন্নত হচ্ছে। এআই এর প্রভাবের প্রমান আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পেয়েছি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঝুঁকিগুলো শনাক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ এই প্লাটফর্মগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি মানুষ তথ্য জানতে আসে; আর এ সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ভুল তথ্য ছড়িয়ে থাকে।

তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ার নতুন ঢেউয়ে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝড়ের সম্মুখিন হতে যাচ্ছে এই প্লাটফর্মগুলো। বেশ কয়েকটি শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক নির্বাচন সম্পর্কিত মিথ্যাতথ্যের প্রয়োগ থেকে সরে এসেছে। গত ছয়মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমানে কর্মী ছাঁটাই করেছে তারা।

চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল জজ মার্কিন সংস্থাগুলো কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করবে তার একটি সীমা রেখা টেনে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সিদ্ধান্তে কেন্দ্রিয় সরকার ও রাজ্যগুলোর পক্ষে নির্বাচন-সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা কঠিন হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। অবশ্য গত শুক্রবার আপিল কোর্ট অস্থায়ীভাবে অর্ডারটি ব্লক করে দিয়েছেন।

অন্যদিকে এআই প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিল্প, মার্কিন আইনপ্রনেতা এবং রেগুলেটরদের আহবান সত্তেও রেগুলেটররা এখনো বাস্তবিক অর্থে এআই প্রযুক্তির জন্য কোন সীমারেখা তৈরি করতে পারেন নি।

এআই গবেষক ডেভিড ইভান হ্যারিস বলেছেন, ‘পুরনো হুমকিগুলো মোকাবিলা করার সক্ষমতা নিয়েই আমি তাদের প্রতি আস্থা পাই না যেখানে সেখানে এখন নতুন হুমকি আসছে।’

শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলো সিএনএনকে জানিয়েছে ভুল তথ্য নিয়ে তাদের বর্তমানে নীতিমালা এবং চর্চা রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃত্রিম অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে সৃষ্টি করা কনটেন্টেগুলোতে ভুল তথ্য শনাক্ত করতে পারে তারা। তবে জেনারেটিভ এআই শনাক্তকরন নিয়ে কাজ করে এমন কেউ কোন সাক্ষাতকার দিতে রাজি হয় নি।

টাফটস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুলের গ্লোবাল বিজনেস বিভাগের ডিন ভাস্কর চক্রবর্তী বলেছেন, ‘এই প্লাটফর্মগুলো অতীতেও প্রস্তুত ছিলো না এবং এরা এখন প্রস্তুত হতে যাচ্ছে সত্যিকার অর্থে এমন কোন কারণ নেই।’ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভুল তথ্য ছড়ানো নতুন কিছু নয়। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে খুব দ্রুত, খুব সহজে এবং কম খরচেই বিপুল পরিমান ভুয়া তথ্য তৈরি করা যায়।

জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক কোম্পানি ওপেনএআইও সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো নিয়ে সতর্ক করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক প্লাটফর্মই জানিয়েছে নির্বাচনের অখন্ডতা রক্ষা নিয়ে তারা পরিকল্পনা করছে। এরমধ্যে এআই সৃষ্ট কনটেন্টের হুমকি নিয়েও কাজ করবে তারা। চলতি বছরের শুরুতে টিকটক একটি নীতিমালা চালু করেছে। যেখানে বলা হয়েছে এআইয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট ‘সিনথেটিক’ অথবা ম্যানিপুলেটেড মিডিয়াকে অবশ্যই পরিস্কারভাবে লেবেল করতে হবে।

ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে এমন কনটেন্ট নিষিদ্ধ করতে একটি ম্যানুপুলেটেড মিডিয়া পলিসি তৈরি করেছে ইউটিউব। ইউটিউবের মুখপাত্র আইভি চই এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রযুক্তিগত বিভ্রান্তমূলক কনটেন্ট যা ব্যবহারকারীকে বিভ্রান্ত করে এবং ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে তা কোনভাবেই ইউটিউবে স্বীকৃত নয়। মেশিন লার্নিং এবং হিউম্যান রিভিউ ব্যবহার করে আমরা ম্যানুপুলেটেড কনটেন্ট শনাক্ত করি।’

মেটার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা মিথ্যা দাবিগুলোকে মুছে ফেলে। এরপরেও কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ সব সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোকে এআই তৈরি অথবা ম্যানিপুলেট করা কনটেন্ট পরিস্কারভাবে লেবেল করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সিএনএন/আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/ZbQhL9w
Previous Post Next Post