অডিটের বিপুল পাওনা, মধ্যস্থতার আশায় গ্রামীণফোন

আল-আমীন দেওয়ান : অডিট আপত্তিতে বিটিআরসির বিপুল পাওনা ইস্যু নিয়ে এখনও মধ্যস্থতায় বসতে পারেনি গ্রামীণফোন।

বিটিআরসির পাওনা দাবির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ‘হিসাব’ নিয়ে মধ্যস্থতার জন্য ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অপারেটরটি। যদিও এই টাকার মধ্যে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে তারা।

গ্রামীণফোন বলছে, পাওনা নিয়ে এই বিরোধ নিস্পত্তিতে মধ্যস্থতার বিষয়টি আইন অনুযায়ীই চাওয়া হচ্ছে।

Techshohor Youtube

মধ্যস্থতা নিয়ে আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি গ্রামীণফোন প্রথম বিটিআরসিকে চিঠি দেয় এই অডিট আপত্তির ‘মধ্যস্থতা’ নিয়ে আলোচনার জন্য।

গ্রামীণফোন ওই আবেদনে বলেছিলো, তাদের মামলায় সিপিসি ৮৯ ধারায় আপোষের বিধান আছে । কিন্তু বিটিআরসি বলছে, গ্রামীণফোন ওই ধারার বিধান অনুযায়ী তাদের কাছে আবেদনই করেনি। তাই মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে বিটিআরসি।

এরপর ২০ মার্চ গ্রামীণফোন আবার বিটিআরসির কাছে আবেদন করে মধ্যস্থতায় বসার জন্য। বিটিআরসি এবার এই বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ওই চিঠি পাঠায়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ২২ জুন বিটিআরসিকে বলে, দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর অধীনে মধ্যস্থতার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা বা আদেশ থাকলে সে অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে।

বিটিআরসি বলছে, তারা এ বিষয়ে আইন-বিধি আরও পর্যালোচনা করে দেখছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলছেন, ‘রাষ্ট্রের এই বিপুল পাওনার বিষয়টিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কনসার্ন রয়েছে। অপারেটরটি আদালতে গেছে আর আমরাও আইনের বাইরে যেতে পারি না। তবে আমরা সরকারি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চুল পরিমাণ ছাড় দেইনি, দেবোও না।’

যা ঘটেছে :

গ্রামীণফোনের জন্ম থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অডিট করে বিটিআরসি। বেসরকারি অডিটরদের করা ওই নিরীক্ষায় অপারেটরটির কাছে ১২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কমিশনের পাওনা বলে উঠে আসে।

২০১৯ সালের শুরুর দিকে ওই টাকা দাবি করে কমিশন গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়।

টাকা দাবি করার পর থেকে তা আদায়ে নানা পদক্ষেপ নিতে থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এর মধ্যে ব্যন্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া এবং ২২ জুলাই থেকে অপারেটি যাতে আর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন সেবা নিয়ে আসতে না পারে সে জন্য তাদের সব অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অডিট সংক্রান্ত এ সমস্যা সমাধানে অর্থমন্ত্রী ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলাদা পদক্ষেপ নিলেও তাতে সমস্যার সুরাহা হয় না।

পর্যায়ক্রমে দেশের আদালতে যাওয়ার পাশাপাশি অপারেটরটি তাদের বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানিতে যাওয়ার বিষয়ে একটি নোটিসও সরকারকে পাঠায়। এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও ‘উকিল নোটিশ’ পাঠানোর মতো কাণ্ড করে অপারেটরটির মূল কোম্পানি টেলিনর।

চলতে থাকে আইন-আদালত। শেষে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা ১২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার মধ্যে দুই  হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এ আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, নির্ধারিত সময় তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে বিটিআরসি।

এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি রিভিউ আবেদন করে অপারেটরটি। এতে তারা ৫৭৫ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে, যা তারা এক বছরে সমান বারোটি কিস্তিতে পরিশোধ করতে চাইছিল তারা। তবে আবেদনে ওই প্রস্তাব আমলে নেয়নি উচ্চ আদালত।

পরে বছরটির ফেব্রুয়ারিতে ওই রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত গ্রামীণফোনকে বলেন, আগে বিটিআরসিকে ১০০০ কোটি টাকা দিয়ে আসুন এরপর পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে।

এরপর ওই বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসিকে ১০০০ কোটি টাকা দেয় গ্রামীণফোন। এর একদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি রিভিউ আবেদনের রায়ে আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বিটিআরসিকে আরও এক হাজার কোটি টাকা দিতে বলেন।

এরপর গ্রামীণফোন ওই ১০০০ কোটি টাকাও পরিশোধ করে।



from টেক শহর https://ift.tt/LPZIN91
Previous Post Next Post