বাজেটে প্রাপ্তির বদলে নানা করারোপ, হতাশা তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোর

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : নতুন বাজেটে প্রাপ্তির বদলে নানা করারোপে হতাশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও নেতারা।

তারা বলছেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সুপারিশ বা প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। বরং স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্যের সাথে তা যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ।’

রোববার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনগুলোর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

Techshohor Youtube

রাজধানীর কারওয়ান বাজার বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) অংশগ্রহণ করে।

এতে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক এবং ই-ক্যাব সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানান।

রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক বা উল্লেখযোগ্য কোনো সুখবর নেই বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক প্রস্তাব দেওয়ার পরও এ খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর, সফটওয়্যার ও আইটিইএস এর উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা ১০% বৃদ্ধি করে ২০% করা এবং সর্বোপরি দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে সফটওয়্যার ক্রেতাকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেছিলাম। অথচ এগুলোর কোনোটাই বিবেচনায় আনা হয়নি।’

‘অপরদিকে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫%-২৫% করা হয়েছে এবং সফটওয়্যারের ওপর ৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই হলো, প্রতিটি খাত হবে স্মার্ট । যেখানে শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি খাত, জ্বালানী খাত এভাবে সবগুলো খাতই হবে স্মার্ট। কিন্তু  সফটওয়্যারের উপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং ভ্যাট আরোপ করায় এই সফটওয়্যারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলেন তিনি।  

ওয়াহিদ শরীফ বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে বিপিও পরিষেবা পেয়ে থাকেন তাই বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির শিল্পের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উন্নিত হয়েছে, কনট্যাক্ট সেন্টারের অনেক সফটওয়্যার এখনো দেশে তৈরি হচ্ছে না, যা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ – সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং অন্যান্য সফটওয়্যার আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এই শিল্পের সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।

‘কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির ফলে এই শিল্পে মাত্র ৩০০ জনশক্তি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭০ হাজারেরও অধিক জনশক্তির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় এই শিল্পের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০২৪ সালে থেকে বাড়িয়ে নূন্যতম ২০৩০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি । যার ফলশ্রুতিতে, ভবিষ্যতে বিপিও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, ক্রেতা আকর্ষণ কমে যাবে, নতুন বিনিয়োগ ব্যাহত হবে এবং সর্বোপরি বিপিও শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে’ বলেন তিনি।

মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ কাজ করে আসছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্বেও আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সকল সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভুক্তি না করা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত সামগ্রীর উপর শুল্ক না কমায় এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার না করা, ইন্টারনেট সেবার প্রসার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে বলে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।’

‘এমন বিপরীতমুখী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। একই সাথে ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সকল সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আইএসপি সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি’ বলেন তিনি।

মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, এবার বাজেটে মার্কেট প্লেসের যে ডেফিনেশন দেয়া হয়েছে এটা গত তিন- চার বছরের ই-ক্যাবের চেষ্টা। শুধুমাত্র ই-ক্যাব এককভাবে এই ডেফিনেশনের জন্য গত কয়েক বছর ধরে এনবিআর এর সঙ্গে মিটিং করছিলো। যখন ভ্যাটের এই ইস্যুটা ই-কমার্সের ওপর আসে তখন এনবিআরও জানতো না আসলে মার্কেট প্লেসের ডেফিনেশন কী। সেই ডেভিনেশন ঠিক করতে গিয়ে আমাদের তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই সঙ্গায়নের ফলে ডিজিটাল ব্যবসায় ভ্যাটের সুবিধা পাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো সুবিধা পাবে। সবাই একটা ক্লারিটির জায়গা থেকে দাঁড়াতে পারবে। এই খাত আরও গুছিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

সম্মেলনে বিসিএস এর প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি হতাশ। বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ল্যাপটপ, এফএমসি প্রিন্টার ও টোনার কার্টিজ আমদানি পর্যায়ে ১৫% মূসক আরোপ করার ফলে বর্তমানে মোট শুল্কহার ২৬%, যা এ বছর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো একই রকম আছে। একটুও পরিবর্তিত হয়নি। এতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় সম্পূর্ণরূপে ব্যহত হবে।’



from টেক শহর https://ift.tt/Pf1Z9ag
Previous Post Next Post