উইন্ডোজের জন্য সিক্লিনার ব্যবহার কি নিরাপদ?

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: উইন্ডোজ পিসি থেকে অপ্রয়োজনীয় ফাইল পরিস্কার করার নিরাপদ মাধ্যমের নাম সিক্লিনার। ২০১৭ সালে সফটওয়্যারটি হ্যাক হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত হতে সফটওয়্যারটিতে বিপুল পরিবর্তন আনা হয়েছে।

দীর্ঘ কয়েকবছর নিরাপদ উইন্ডোজ ক্লিনার হিসেবে কাজ করে গিয়েছে সিক্লিনার। কিন্তু হ্যাক হওয়ার পর বেশ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে সিক্লিনার আবারো সক্ষম হয়ে উঠলেও উইন্ডোজের জন্য সফটওয়্যারটি নিরাপদ কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গিয়েছে।

সিক্লিনার কি?

Techshohor Youtube

সিসিক্লনার মূলত একটি সিস্টেম ক্লিনআপ ইউটিলিটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি পিরিফ্রম সফটওয়্যার ২০০৪ সালে এটি নির্মাণ করে। অন্যান্য সফটওয়্যারের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলোকে কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলাই সিক্লিনারের মূল কাজ।

এরআগে সফটওয়্যারটিতে রেজেস্ট্রি, কুকি, ক্যাশে ও রিসাইকেল বিন পরিস্কার করার সরঞ্জামগুলোও ছিলো। সম্প্রতি এতে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে, যার মধ্যে পিসি পারফরমেন্স বুস্ট টুলস এবং ড্রাইভার আপডেটার উল্লেখযোগ্য। সফটওয়্যারটি এ পর্যন্ত শত শত কোটিবার ডাউনলোড করা হয়েছে এবং গত এক দশক ধরে নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় পিসি সফটওয়্যারের তালিকায় এর নাম উঠে আসছে।

এটি খুব সহজেই বোঝা যায় যে সিক্লিনারের ‘সি’ বলতে সি ড্রাইভকে বোঝানো হচ্ছে যেখানে সাধারনত উইন্ডোজ ওএস ফাইলগুলো ইনস্টল করা থাকে। তবে ২০০৪ সালে সফটওয়্যারটি উন্মোচনের সময় এর নাম ছিলো ক্র্যাপ ক্লিনার।

এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার জায়ান্ট এভাস্ট ২০১৭ সালে পিরিফ্রম সফটওয়্যার এবং সিক্লিনার কিনে নেয়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এটি ক্রয় করার কিছু সময় পরেই সমস্যা শুরু হয়ে যায়।

সিক্লিনার হ্যাক কি?

২০১৭ সালের শেষের দিকে সিসকো তালোস গ্রুপের নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষকরা রিপোর্ট করে যে ৩২ বিট সিক্লিনারের ৫ দশমিক ৩৩ সংস্করনটিতে একটি ভাইরাস দেখা যাচ্ছে। সফটওয়্যারের এই ভার্সনটি ডাউনলোড করলে এমনটি যদি তা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও হয় তা পিসিকে আক্রান্ত করবে।

ধারণা করা হয়েছিল হ্যাকাররা সিক্লিনার সফটওয়্যারের পরিবেশের সাথে মিশে গিয়েছিল। আর এ কারণেই সার্টিফায়েড ভার্সনেও হ্যাকাররা ম্যালিসিয়াস কোড প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছে। তবে এভাস্টের তড়িৎ পদক্ষেপের সুবাদে ব্যবহারকারীদের আপডেট করা ভাইরাস ফ্রি ৫ দশমিক ৩৪ ভার্সনের সফটওয়্যার দেয়া হয়। তবে প্রতি সপ্তাহে কয়েক লক্ষবার সিক্লিনার ডাউনলোড হয় ; ফলে ধারণা করা হচ্ছে কমপক্ষে ২০ লাখ পিসি হ্যাকারদের কবলে পড়েছে।

সিক্লিনার ব্যবহার করা কি এখন নিরাপদ?

২০১৭ সালে হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর সিক্লিনার এখন নিরাপদ। কারণ এরপর আর কোন হ্যাক অথবা তথ্য ফাঁসের কথা শোনা যায় নি। যদিও এভাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২০১৯ সালে আরো একবার হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কোন সফটওয়্যার আক্রান্ত হওয়ার আগেই তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।

বিশ্বের সুপরিচিত এন্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর একটির মালিকানাধিন এই সিক্লিনার। ফলে এটি খুবই বাস্তব কথা এখানে নিরাপত্তা রক্ষার একাধিক পদক্ষেপ থাকবে। এছাড়া ২০১৭ সালের মতো হ্যাকিংয়ের ঘটনার এড়াতে এভাস্ট সম্পূর্ণ নতুন অবকাঠামোর মাধ্যমে সফটওয়্যারটি পুনঃনির্মাণ করেছে।

২০১৮ সালে সিক্লিনারের সুনাম কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছিল। স্বয়ংক্রিয় আপডেটগুলো নিষ্ক্রিয় করতে ব্যবহারকারীদের ইনপুট ছাড়াই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এছাড়া তথ্যসংগ্রহের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রেও ডিফল্ট দেখায়। অবশ্য এ সমস্যাও সমাধান করা হয়েছে।
আরেকটি প্রশ্ন প্রায় সময়ই করা হয় ‘সিক্লিনার রেজেস্ট্রি ক্লিনার নিরাপদ কিনা?’সবসময়ই এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। রেজেস্ট্রি ক্লিনার টুল ব্যবহার করলে কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

সিক্লিনারের কোন বিকল্প আছে কিনা?

এভাস্ট সিক্লিনার কিনে নেয়ার পর থেকে সফটওয়্যারটির ফ্রি ভার্সন ব্যবহারকারীদের বেশ মনোযোগ কেড়েছে। এটি চালু করার পর থেকে ব্যাকগ্রাউন্ডে খোলা থাকে। তবে প্রো ভার্সনে আপগ্রেড করার ঝামেলা এড়াতে অ্যাপটি থেকে বের হতে চাইলে এসব সমস্যা সমাধান করা যায়।

উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা সিক্লিনার ব্যবহার করে তাদের কম্পিউটার সিস্টেমকে অপ্রয়োজনীয় ফাইল, কুকিজ এবং এমনকি কিছু পুরনো রেজেস্ট্রি এন্ট্রিমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। সফটওয়্যারটি ব্যবহার খুব সহজ এবং কোন ঝামেলা ছাড়াই পিসিতে বেশ কিছু খালি জায়গা তৈরি করে।

বাজারে সিক্লিনারেরও কিছু বিকল্প পাওয়া যায়। যেগুলো সিক্লানারের তুলনায় ভালো। গ্লারি উইটিলিটিস, ব্লিচবিট এবং ওয়াইজ ডিস্ক ক্লিনার উল্লেখযোগ্য। কিছু কিছু কম্পিউটার ম্যানুফ্যাকচারাররা কম্পিউটারে নিজস্ব পিসি ক্লিনিং ইউটিলিটিজ ব্যবহার করে; ফলে উইন্ডোজ পরিস্কার রাখার জন্য আলাদা করে সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

উইন্ডোজে সিক্লিনার ব্যবহার করা যাবে?

অপ্রয়োজনীয় ফাইল ও বিভিন্ন বিটের ব্রাউজার ডেট্রিটাস থেকে উইন্ডোজ পিসিকে নিরাপদ রাখার জন্য সিক্লিনার খুবই উপকারী একটি টুল। সফটওয়্যারটির প্রো ভার্সন ব্যবহার করলে এখানে আরো একাধিক নতুন ফিচার পাওয়া যাবে।

সিক্লিনার প্রথম উন্মোচনের পর থেকে উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১ ধীরে ধীরে অনেক উন্নত হয়েছে। তবে উইন্ডোজ সেটিংসে ফাইল পরিস্কার করার একই ধরনের অনেক ফিচার থাকলে এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কোন টুল ব্যবহারের প্রয়োজন থাকে না।

পিসি ম্যানেজার নামে নিজস্ব ক্লিনার অ্যাপ নির্মাণে কাজ করছে মাইক্রোসফট। এখানে অনেক বিল্ট ইন উইন্ডোজ টুল এবং ব্যবহারকারীবান্ধব ফিচার থাকবে।

আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/0Sp2u7G
Previous Post Next Post