টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: সন্তানদের ভিডিও গেইমে আসক্তি যে কোন অভিভাবকের জন্য দুঃশ্চিন্তার বিষয়। যুক্তরাজ্যের বারবাডোসের বাসিন্দা নারা ওয়ার্ডের কাছে কম্পিউটার গেম খেলার সময় বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণে রাখাকে রীতিমতো পূর্ণকালীন চাকুরীর মতো মনে হয়।
ওয়ার্ডের ফিন (১৪) এবং লেইফ (১২) নামের দুজন ছেলে সন্তান রয়েছে। ওয়ার্ড জানান, লেইফ যখন রোব্লক্স খেলা শুরু করে তখন থেকেই গেমসের মুদ্রা রোবক্স চাইতে থাকে। রোবক্সের মাধ্যমে প্লেয়াররা ভিডিও গেমসের চরিত্রগুলো আপগ্রেড করে নিতে পারে অথবা ভার্চুয়াল আইটেম কিনতে পারে। তার এই গেমপ্রীতি দেখে লেইফের দাদা-দাদি এই বড়দিনে তাকে ২০০ ডলার অ্যাপল ক্রেডিট দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই সে এই মুদ্রা শেষ করে ফেললো। এরপর থেকে আমি তাকে মাসে ১০ ডলার মূল্যমানের বেশি রোবক্স দেই না। কিন্তু দেখা যায় মুদ্রা না থাকলে গেম খেলতে যেয়ে সে খুব দ্রুত হতাশ ও বিরক্ত হয়ে যায়।
গেমসের পেছনে ছেলেরা কিভাবে অর্থ অপচয় করে তা দেখে রীতিমতো হতবাক। বর্তমান যুগের গেমিং কোম্পানিগুলো প্রাথমিক ভিডিও গেম বিক্রির পরিবর্তে ইন-গেম কেনাকাটা অথবা মাইক্রো ট্র্যানজেকশনের মাধ্যমে মুনাফা করার চেষ্টা করছে। ইন-গেম কেনাকাটার সুবিধা হচ্ছে অতিরিক্ত চরিত্র, চরিত্র বা অস্ত্র আপডেট করা যায় ইচ্ছেমতো। এর ফলে অতিরিক্ত কেনাকাটা করে নি এমন প্লেয়ারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করা যায়। গত বছর এই অনলাইন মাইক্রোট্রানজেকশন মার্কেটের আকার ছিল ৬ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলার; যা চলতি বছর বেড়ে সাত হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারে পৌঁছুবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
তবে এই ইন-গেম কেনাকাটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু কোম্পানি ইন- গেমে আসা নতুন কনটেন্টের কেনাকাটা ফ্রি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গেমিং কোম্পানিগুলো মূলত আচরনগত মনোবিজ্ঞান ব্যবহার করে প্লেয়ারদের আরো ব্যয় করতে উৎসাহী করে তুলে বলে জানিয়েছেন লাফব্রুহ ইউনিভার্সিটির হিউম্যান জিওগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক সারাহ মিলার। তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেন, গেমিং ও জুয়ার মধ্যকার যোগসূত্রটি ‘ক্রমে ঝাপসা’ হয়ে আসছে। সারাহ তার গবেষণায় দেখিয়েছেন জুয়া খেলার কৌশলগুলো ব্যবহারের কারণে গেমাররা দীর্ঘ সময় খেলতে থাকে এবং অনেক অর্থ ব্যয় করে।
গেমগুলি কিভাবে প্লেয়ারদেরকে অর্থ ব্যয় করতে উৎসাহী করে তুলে সে বিষয়টি আরো পরিস্কার করে বলেছেন প্যারেন্ট ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা ভিকি শুটবল্ট। শিশুদেরকে ডিজিটাল বিশ্ব বিমুখ করতে অভিভাবকদের সাহায্য করে এই প্যারেন্ট ওয়ার্ল্ড।
ভিকি বলেছেন, ইন-গেম কেনাকাটার অর্থ হচ্ছে ঘন্টা বেধে থাকা একঘেয়েমি গেমিং থেকে বেরিয়ে আসা। এ কারনে প্লেয়াররা ইন-গেম কেনাকাটা করতে ভালবাসে। এছাড়া কোন কিছু কেনাকাটা না করলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে যাচ্ছে এমন অনভূতি হয়। অন্যদিকে ইন- গেম কারেন্সির মতো কিছু ‘অস্পষ্ট কৌশলের’ কারণে কি পরিমান অর্থ ব্যয় হচ্ছে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই থাকে না। ‘লুট বক্স’ নামেও একটি কৌশল ব্যবহার করা হয়। এখানে প্লেয়াররা ভেতরে কি আছে তা জেনেই একটি বক্স কিনে থাকে। তবে এ ধরনের বক্সে গেম পরিবর্তনের আইটেম থাকে। কিন্তু প্রায় সময়ই দেখা যায় পুরস্কারটি একটি মাঝারি কাস্টমাইজেশন ছাড়া কিছুই নয়। এদিকে গেমসের পেছনে যখন ব্যয়ের পরিমান বাড়ছে অন্যদিকে এটি শিশুদের জন্য উপকারী বলছেন অনেকে। বলা হচ্ছে গেমিং চাপ দূর, জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একাকীত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
কিশোর ঝেংহুয়া ইয়াং বলেছেন, ‘ আমি প্রচুর ভিডিও গেম খেলি। সিঙ্গেল প্লেয়ার গেমগুলি খেলার সময় নিজেকে হিরো মনে হয়। আর মাল্টিপ্লেয়ার গেমগুলো অনেক লোকের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। তিনি মনে করেন মাইক্রোট্রানজেকশনের প্রভাব ব্যবহারকাীরর ওপর নির্ভর করছে। ইয়াং বলেন, ‘কেউ যদি ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার না করে তাহলে এটি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। মাইক্রোট্রানজেকশনের ক্ষেত্রেও তাই। ’ অভিভাবকদের পক্ষে রেজিস্টার্ড ইমেইল, পাসওয়ার্ড এবং পেমেন্ট কার্ডগুলো বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও ডিভাইসের মধ্যে পর্যবেক্ষণে রাখা কঠিন বিষয়।
এছাড়া কোন কেনাকাটা না করা অথবা ব্যয় সীমিত করে দেয়ার মাধ্যমে গেমিং নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সন্তানের সাথে কথা বলা। ইয়াং জানান, আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি অভিভাবকদের উপস্থিতি কম থাকলেই সমস্যাটি তৈরি হয়। বর্তমানে আমার দুজন সন্তান রয়েছে। গেমকে বেবিসিটিং টুল হিসবে ব্যবহার না করে আমি তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হই যে তাদের জীবনে আমি এখনো আছি। এছাড়া স্ক্রিন টাইম বেধে দেয়া এবং পাসকোড দিয়েও গেমিং নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
বিবিসি/আরএপি
from টেক শহর https://ift.tt/PfwR7W8