কবে আসছে সিক্সজি, গতি থাকবে কেমন ?

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: সিক্সথ জেনারেশন সেলুলার নেটওয়ার্ক টেকনোলজিকে সংক্ষেপে সিক্সজি বলা হয়। সিক্স জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ এখনো চলছে। বর্তমান নেটওয়ার্কের তুলনায় সিক্সজিকে কতোটা আধুনিক করা হবে সে বিষয়ে এখনো চিন্তাভাবনা চলছে। সিক্সজির গতিকে অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন করতে এখানে অতিরিক্ত সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সি যোগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩০ সালের শুরুর দিকে এই নেটওয়ার্ক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বেই সিক্সজি নিয়ে কাজ চলছে। এ অবস্থায় সিক্সজি কেমন হবে এবং কবে নাগাদ বর্তমান নেটওয়ার্ক আপগ্রেড হয়ে সিক্সজি হবে সে বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আসে ১৯৮১ সালে। এসময় সর্বপ্রথম যে বাণিজ্যিক সেলফোন আসে তা অ্যানালগ প্রযুক্তিতে চলতো; এই প্রযুক্তিকে আমরা এখন ওয়ানজি বলতে পারি। এর প্রায় দশ বছর পর নতুন প্রজন্মের সেলুলার প্রযুক্তির আবির্ভাব হলো। ১৯৯২ সালে টুজি আসলো, থ্রিজির আগমন ২০০১ সালে, ফোরজি ২০০৯ সালে এবং ফাইভজি ২০১৯ সালে এসেছে।

আর বর্তমানে সিক্সজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের কার্যক্রম একেবারে শুরুর দিকে রয়েছে। স্মার্টফোনের বেসিক কনটেন্টগুলো আরো দ্রুত গতির করে তোলাই সিক্সজি সেলুলার টেকনোলজি স্থাপনের অন্যতম লক্ষ্য নয়। বরং এখানে এমন একটি সেলুলার নেটওয়ার্ক সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে যা রিয়েল টাইমের বাস্তবতা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) একটি ভবিষ্যত মডেলে সমর্থন দিতে পারবে। আমরা যখন সিক্সজি সম্পর্কে কোন লেখা পড়ি বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ক ভারী ভারী ঘোষণা সিক্সজি নিয়ে আমাদের কল্পনাকে আরো প্রসারিত করে তোলে। এসব কোম্পানি জানায় আমাদের শারীরিক ও ভার্চুয়াল জীবনের সংমিশ্রনের জগত মেটাভার্স পরিচালিত হবে সিক্সজির মাধ্যমে।

Techshohor Youtube

বর্তমানের সেলুলার টেকনোলজি মেগাহার্টজ (এমএইজেড) এবং নিন্ম গতির গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের মধ্যে পরিচালিত হয়। সিক্সজির জন্য ৩০-৩০০ গিগাহার্টজ রেঞ্জের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ধরে রাখা হয়েছে। এটি মিলিমিটার ওয়েভস অথবা এক্সট্রেমলি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ইএইচএফ) রেডিও নামে পরিচিত। এছাড়াও এই নেটওয়ার্কের টেরাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি থাকবে ৩ হাজার গিগাহার্টজ পর্যন্ত। এই ফ্রিকোয়েন্সিগুলো বর্তমান সেলুলার টেকনোলজির ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটির চেয়েও অনেক বেশি ডাটা স্থানান্তর করবে।

সিক্সজির গতি কতোটা দ্রুত হবে?

খুব কম সংখ্যক লোকই থ্রিজি, ফোরজি এবং ফাইভজির মধ্যে পার্থক্য করে থাকে। কিন্তু তারা যখন কিছু ছবি বা হাই ডেফিনেশনের ভিডিও দেখতে গিয়ে অধীর ধৈর্য্য নিয়ে বসে থাকে তখন এদের মধ্যে সত্যিকারের ব্যবধান টের পায়। সিক্সজি কতোটা দ্রুত গতির হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ সিক্সজি নিয়ে বর্তমানে যেসব পরীক্ষা- নিরীক্ষা চলছে তা এখনো বিদ্যমান প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমেই হচ্ছে। তবে এতটুকো বলা যায় ফাইভজির চেয়ে সিক্সজি ৫০ থেকে ১০০গুন দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে। প্রকৃত অর্থে এটি কেমন হবে তা বোঝা না গেলেও বেশ কিছু গবেষণায় আকর্ষনীয় তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যেমন- চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পার্পল মাউন্টেইন ল্যাবরেটরিজ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একটি ল্যাবরেটরি সেটিংয়ে টেরাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে ২০৬ জিবিপিএস তথ্য স্থানান্তরের দাবি করেছে।

একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের আরেকদল গবেষক দাবি করেন তারা এক কিলোমিটার দূরত্বে এক টিবিপিএস তথ্য প্রেরণ করেছে। এই গতি ফাইভজির সর্বোচ্চ গতির চেয়ে ২০ থেকে ১০০ গুন বেশি।

সিক্সজি কখন আসবে?

সিক্সজি নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে কাজ চলছে, তবে তা এখনো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। সিক্সজি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে পৌছুতে আরো কয়েক বছর লেগে যাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কোয়ালকমের সিক্সজি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে জানা যায় নেটওয়ার্কটি চালু হওয়ার সম্ভাব্য সময় ২০৩০ সাল। এরিকসনও ২০৩০ সালের শুরুতেই সিক্সজি প্রবর্তনের কথা জানিয়েছে। সিক্সজি নিয়ে যেভাবে কাজ চলছে তাতে আশা করা যায় মেট্রোপলিটন অঞ্চলে ২০৩০ সালের মধ্যেই সিক্সজি নেটওয়ার্ক আসবে। আর গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোপলিটন অঞ্চলের বাসিন্দা না হলে সিক্সজির জন্য গোটা ২০৩০ সাল অপেক্ষা করতে হতে পারে। ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম ফাইভজি নেটওয়ার্ক এসেছিল।

এরপর চারবছর অতিক্রম হলেও লাখ লাখ সেলুলার সাবস্ক্রাইবার ফোরজি ব্যবহার করছেন এবং উপকূল অঞ্চলগুলোয় এখনো ফাইভজি পুরোপুরিভাবে পাওয়া যায় না। জিএসএমএর ২০২৩ মোবাইল ইকোনমি রিপোর্ট অনুযায়ি, নর্থ আমেরিকায় ফাইভজি প্রবর্তনের হার মাত্র ৩৯ শতাংশ; এখানে অর্ধেকের বেশি সেলুলার সাবসক্রাইবার এখনো ফোরজি ব্যবহার করছেন। ২০৩০ সাল নাগাদ নর্থ আমেরিকায় ফাইভজি গ্রহনের হার হবে ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ যখন কিনা সিক্সজি চলে আসবে তখনো সেখানে ফোরজির সাবসক্রাইবার থাকবে।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে বিপুল সংখ্যক লোক জানেই না তাদের ফোনটি ফাইভজি সমর্থন করে কিনা। এমনকি তারা যদি ফাইভজি নেটওয়ার্কের মধ্যেও থাকে তারা এখনো এর গতি নিয়ে হতাশ। তাই আমরা যদি বাস্তবতার দিক থেকে দেখি তাহলে বোঝা যাচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই সিক্সজি ব্যবহার করার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। নর্থ আমেরিকার বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এবং অন্যান্য দেশের বেশিরভাগ সাবসক্রাইবার তখনো ফাইভজি নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকবে।

আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/ESeyrzC
Previous Post Next Post