সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ কিশোরদের জন্য কখনো ইতিবাচকও

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: কিশোর বয়সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যাসেজের আদান-প্রদান খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু ভার্চুায়াল এ যোগাযোগ তাদের ওপর ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে? কিশোর বা তরুনদের স্ক্রিন টাইম নিয়ে যারা চিন্তিত তাদের জন্য কিছু সুসংবাদ এসেছে নতুন এক গবেষণায়। এ গবেষণা বলছে অনলাইনে সমবয়সীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এসব কিশোরদের মধ্যে বিষন্নতা কমে আসে ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

যুক্তরাজ্যের কারদিফ ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ ডেসিফার কিশোরদের স্ক্রিন টাইমের সাথে মানসিক সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছে। এ গবেষণার সহযোগি ড.রেবেকা অ্যান্থনি বলেছেন, ২০১৯ সালে সম্পন্ন স্টুডেন্ট হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং সার্ভের শীর্ষক জরিপে স্ক্রিন টাইমের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের একটি ফলাফল উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, জরিপে পাওয়া ফলাফলটি খুব ছোট হলেও অনলাইনে কাটানো সময় এবং হতাশার লক্ষণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে একটি পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে আমরা সত্যিই সোশ্যাল মিডিয়ার সূক্ষè বিষয় খেয়াল করছি না।’

তিনি আরো বলেছেন, অনলাইনে অন্য লোকেদের সাথে কথা বলে সময় কাটানো কিশোর-কিশোরিরা জানতো না যে এটি ‘খুব উপকারি আচরনের সাথে সংশ্লিষ্ট’ নয়।

Techshohor Youtube

আরেকটি জরিপে দেখা যায় ওয়ালেসের যে কিশোর-কিশোরীরা মহামারীরর সময়ে ব্যায়ামের তুলনায় স্ক্রিনে সময় বেশি দিয়েছে তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই ভয়াবহ মানসিক দুর্ভোগে ছিলো। তবে নতুন গবেষণাটি এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য কিছু সুসংবাদ নিয়ে এসেছে।

জরিপে দেখা গিয়েছে ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা গত বছর প্রাইমারি স্কুলে থাকার সময় ফোন ব্যবহার শুরু করে। শুরুতে শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের জন্য তারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতো। সেকেন্ডারি স্কুলে যাওয়ার পর ফোন ব্যবহারের ব্যপ্তি বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থী সাশা বলেন, ‘আমি সততার সাথেই বলছি সবার কাছেই একটি ফোন থাকায় আমি এর ব্যবহার আরো বাড়িয়ে দেই। গ্রæপ চ্যাটগুলো আমাদের সময়কে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।’

কিশোরিরা বলছেন সেকেন্ডারি স্কুলের যাওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপ তাদের কাছে আরো ইতিবাচক হিসেবে ধরা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রুবি নামের এক শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘ফোনে টিকটক থেকে আসক্তি বেড়ে যায়। তবে কথা বলার জন্য ¯স্নাপচাট এবং ইনস্টাগ্রাম।’ কিশোরিরা বলছেন তারা সবার সাথে কথা বলার জন্য ¯স্নাপচাট বা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করলেও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ।

রুবি বলছেন . সন্ধ্যার সময়গুলোয় বাড়ি থেকে প্রিয় বন্ধুদের সাথে ম্যাসেজে কথা বলতে বেশ ভালো লাগে।
এক্ষেত্রে প্রযুক্তি বন্ধুত্বকে আরো গাঢ় করে তুলছে কিনা জানতে চাইলে কাইট বলেছেন, আমি মনে করি ব্যাপারটি তাই। যখন মন খারাপ থাকে বা বিরক্ত লাগে বন্ধুদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। কোন ভালো কিছু ঘটলে সাথে সাথে বন্ধুদের জানিয়ে আনন্দ কয়েকগুন বাড়িয়ে নেয়া যায়।

তবে ১৭ বছর বয়সী ইভি কোয়ান অনলাইনে যোগাযোগের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে যেমন জানেন তেমনি নেতিবাচক দিক নিয়েও সতর্ক রয়েছেন। ইভি বলেন, যখন একাকিত্বের বিষয় আসে তখন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে মনে হয় গোটা পৃথিবী পাশে রয়েছে। তেমনি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর চ্যাটের সাথে যুক্ত না হলে নিজেকে পুরো বিচ্ছিন্ন ও একাকী মনে হয়।’

অনলাইন সেফটি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট ম্যাটারসের মনস্তত্ববিদ ড. লিন্ডা পাপাডোপউলাস বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাচ্চারা কি করছে সে বিষয়ে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনার বাচ্চারা অনলাইনকে কিভাবে ব্যবহার করছে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখুন। তাদের আচরনগত পরিবর্তন নিয়ে সজাগ থাকুন। প্রযুক্তি ব্যবহারের পর তারা কি হাসিখুশী থেকে মনমরা হয়ে গিয়েছে? নাকি উগ্র থেকে শান্ত হয়েছে?’

তিনি বলেছেন , কিছু কিশোরদের আত্মনিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। যেমন-বাড়ির কাজ করার সময় তারা ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখে। বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন তিনি।

বিবিসি/আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/uYUt4SQ
Previous Post Next Post