অর্থের বিনিময়ে ভেরিফায়েড চিহ্ন : ব্যবহারকারী ও ব্যবসা প্রভাবিত হবে কতটুকো?

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম অথবা টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কিছু কিছু অ্যাকাউন্টের পাশে আমরা নীল রংয়ের চেকমার্ক দেখে থাকি। এই চিহ্নটি হলো মূলত অ্যাকাউন্টটিকে ভেরিফায়েড বা বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। এতোদিন অ্যাকাউন্টধারী সম্পর্কে যাচাই বাছাই করে বিনামূল্যে এই নীল টিক দেয়া হতো। কিন্তু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অনেকে এই চিহ্ন প্রদান পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে এবং বাকিরাও আনতে যাচ্ছে। মোটা দাগে এই পরিবর্তনটি হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন চিহ্ন পাওয়া। যা আগে বিনামূল্যে দেয়া হতো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিবর্তন ব্যবসা এবং ভোক্তারা কিভাবে অনলাইনে যোগাযোগ করে তার ওপর প্রভাব ফেলবে।

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামেরপ্যারেন্ট কোম্পানি মেটা এক ঘোষণায় অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশনের এই বিশেষ অধিকার পাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে এই পরীক্ষামূলক বাজার অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় এ ধরনের পরিবর্তনটি বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নেয়ার পর বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। মাস্ক প্রথমেই বলেছিলেন পেইড ব্লু চেকমার্ক থাকার কারণে প্রতারকরা আর ভুয়া অ্যাকাউন্ট বানিয়ে ধোকা দিতে পারবে না।
আগে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের পাশে এই টিকচিহ্ন দেয়া হতো। যাকে বেশ সম্মানসূচক মনে করা হতো। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে এই টিক চিহ্ন পাওয়ার সুবিধা যোগ হওয়ায় এখন আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের অ্যাকাউন্ট ও আর কারা অর্থের বিনিময়ে টিক চিহ্ন পেয়েছেন তার মধ্যে কোন পার্থক্য পাওয়া যায় না।

ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকও টুইটারের পথে

Techshohor Youtube

মেটার পেইড ভেরিফিকেশন পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হওয়াকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ দারিয়ান কোভাকস আয় বাড়ানোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। দেখা গিয়েছে যখন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের ব্যবহারকারীদের ভালো গ্রাহকসেবা দেয়া হয় এবং বিভিন্ন সমস্যাগুলো সমাধানের গুরুত্ব পায় তখন কিন্তু ভুয়া অ্যাকাউন্টের মতো সমস্যা নিয়ে কাজের গতি শ্লথ হয়ে যায়।
কোভাক বলেছেন, ‘মেটা কখনোই ভালো গ্রাহক সেবা দেয় নি। আর এ কারণেই তারা আশা করছে গ্রাহকরা অর্থের বিনিময়ে নিজেদেরকে ভেরিফায়েড করবে। তিনি অনলাইনে এই অর্থের বিনিময়ে পরিচয় শনাক্তকরন প্রক্রিয়াকে ‘ইলন মাস্ক এপ্রোচ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কোভাক আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশ্বে মাস্কই এই ব্যবস্থার প্রচলন করেছেন। তিনি ভেবেছেন সাধারন মানুষ সেভাবেই ভেরিফিকেশনের পথ কিনবে যেভাবে তিনি নিজে কিনতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে বিনামূল্যে ভেরিফিকেশন দেয়ার ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন কোভাক। বৈধ গ্রæপ বা ব্যাক্তিপর্যায়ের অ্যাকাউন্টগুলোর সবাই নীল টিক মার্ক পায় নি। আর যারা পেয়েছেন তাদেরকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।
তিনি মনে করেন এই মডেলের একটিও নিখুঁত নয়। অর্থের বিনিময়ে ভেরিফিকেশন চিহ্ন পাওয়ার মডেলটি সবার জন্য ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া সবার জন্য এ ধরনের ধারণা পাল্টে দিবে।
অন্যদিকে মেটা জানিয়েছে, ভেরিফিকেশনের ওপর যে চার্জ ধরা হয়েছে তা ব্যবহারকারীদের সেবা বৃদ্ধির বিনিয়োগের একটি অংশ। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেটার ভেরিফায়েড বৈধ গ্রাহকরা একটি ব্যাজ পাবেন।

মেটা জানিয়েছে, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাকাউন্ট নকলসহ নানা সমস্যা সম্পর্কে আগের মতোই তাদেরকে জানাতে পারবেন। তবে যারা সাবস্ক্রাইবার তাদের এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য কোম্পানির ভূমিকা আরো আরো সক্রিয় থাকবে।

ব্লু টিক কি আর আগের মতো বিশ্বাসযোগ্য হবে?

নীল টিক মার্ক দেয়া কোন পেইজের পোস্ট আমরা সহজেই বিশ্বাস করি। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার বৈদ্যনাথন বলেছেন, ‘যদি কেউ অর্থের বিনিময়ে যাচাইকরন করতে যায় তাহলে সেখানে কিছু বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপার থাকতে হবে। মেটা এ ধরনের কিছু করতে পারবে বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে। কিন্তু টুইটার কখনোই তা করতে পারবে না।
বৈদ্যনাথন বলেছেন, মেটা মূলত ‘পেশাদার’দের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যেখানে টুইটারে পরিস্থিতি পুরো বিপরীত। টুইটারে ভেরিফিকেশন কাজে ব্যবহারকারীদের যাচাইয়ের কাজ করতো এমন অনেক অভিজ্ঞ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বিস্তারিতভাবে যাচাইয়ের জন্য নিয়োজিত কোন দল ছড়াই মাসে খুব কম অর্থের বিনিময়ে চেকমার্ক দেয়া হয় তাহলে এটি সামাজিক নেটওয়অর্ক এবং সাধারন মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মানুষের সুনামে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে। মানুষ এমন কিছু বলবে এবং টুইট করবে যা আগে কখনো দেখা যায় নি। রীতিমতো একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

প্রভাবশালী ও গোল্ডেন রেট্রিভারসদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ

পেইড ভেরিফিকেশনের একটি ভালো বাজার রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ব্যবসা করেন , রাজনীতিবিদ এবং ইনফ্লুয়েন্সাররা এই সুযোগ লুফে নিবেন। অতিরিক্ত সুরক্ষার সুবিধা ব্যবসায়ী, নিজেকে প্রমোট করা এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য কাজ করাকে অনেক সহজ করে দিবে।
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার বৈদ্যনাথন এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘অনেকে কিছু বিক্রি করেন না। কোন অর্থ উপার্জন করেন না। কিন্তু এরপরেও প্রতিদিনই ভূয়া অ্যাকাউন্ট জুড়ে তার কথা উল্লেখ থাকে। এই প্রবনতাটি গত বছরই গড়ে উঠে। ফলে এ বিষয়টি পরিস্কার যে সমস্যাটি (আনপেইড অ্যাকাউন্ট) সমাধানে কোন গুরুত্বই দেয়া হয় নি।
জেলি মার্কেটিংয়ের কোভাকস বলেছেন মেটা এ ধরনের সাবসস্ক্রিপশন কতদূর এগিয়ে নিবে তা পরিস্কার নয়। কারণ এই মুহুর্তে মেটা এটিকে তাদের প্রচার ও বিপননের প্রধান অংশ করে তুলে নি।

সিবিসি/আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/KNnYhwx
Previous Post Next Post