বিলম্ব ফি নিয়ে লাইসেন্স সংশোধন, আপত্তি মোবাইল অপারেটরদের

আল-আমীন দেওয়ান : গাইডলাইন ও লাইসেন্সে বিলম্বে প্রযোজ্য ফি এবং চার্জের অর্থ জমা সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করছে বিটিআরসি।

আর এ নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।

বিটিআরসির সকল লাইসেন্সিরা নিজ নিজ গাইডলাইন এবং লাইসেন্সের বিধি অনুযায়ী প্রযোজ্য ফি এবং চার্জের অর্থ পরিশোধ করে। যেখানে সব জায়গায় এসব ফি ও চার্জ দেরিতে দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ফি ও চার্জ নিয়ে লাইসেন্স চালু রাখা কিংবা অর্থ না দিলে লাইসেন্স বাতিল বা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিধি রয়েছে।

Techshohor Youtube

বিটিআরসি বলছে, তারা এই বিলম্ব ফি ও চার্জ সংশ্লিষ্ট বিধি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক বা এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে স্পষ্টীকরণ করেছে। আর এটিই এখন সব লাইসেন্সিদের গাইডলাইন ও লাইসেন্সে সংশোধনী দেয়া হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র স্পষ্টীকরণ।

এনটিটিএনের গাইডলাইন ও লাইসেন্সে বিটিআরসির করা ওই সংশোধনীতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ পূর্বানুমোদন দেয়।

সংশোধনী ও বিটিআরসির সিদ্ধান্ত :

এনটিটিএনদের ক্ষেত্রে বিটিআরসির করা সংশোধিত ধারাটি হলো, ‘বার্ষিক লাইসেন্স ফি এবং রেভিনিউ শেয়ারিং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত তারিখের ৬০ দিন পর্যন্ত বকেয়া অর্থ প্রদান করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে, লাইসেন্সধারীকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে বিলম্ব ফিসহ কমিশনকে পরিশোধ করতে হবে । উপরে উল্লেখিত ৬০ দিন অতিক্রান্তের পরও যদি বকেয়া পরিশোধজনিত ব্যর্থতা অব্যাহত থাকে, সেক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। যাইহোক, মূল অর্থ গননা করতে হবে এবং বিলম্ব ফিসহ পরিশোধ করতে হবে প্রকৃত অর্থ প্রদানের তারিখ বা লাইসেন্স বাতিলের তারিখ পর্যন্ত, যেটি আগে।’

এনটিটিএনে এটি গাইডলাইন ক্লজ ১৫.০৬ এবং লাইসেন্সিং ক্লজ ৬.০৬ এ প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

বিটিআরসির সিদ্ধান্তে এখন এই সংশোধিত ধারাটিই মোবাইল ফোন অপারেটরসহ বিটিআরসির সকল লাইসেন্সির গাইডলাইন ও লাইসেন্সে হবে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের ক্ষেত্রে টুজি লাইসেন্স ৫.২.৩, থ্রিজি লাইসেন্স ৫.০২.৩ এবং ফোরজি লাইন্সেন্স ৫.০৩ ধারায় হবে। আর অন্যান্য লাইসেন্সিদের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত বিষয়ের ধারায় হবে।

ইতোমধ্যে তা সরকারের পূর্বানুমোদেনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আর পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে এই সংশোধনী স্ব-স্ব লাইসেন্স জারির তারিখ হতে কার্যকর হবে।

মোবাইল অপারেটরদের গাইডলাইন-লাইসেন্সে এখন কী আছে ?

মোবাইল অপারেটরদের টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি গাইডলাইন-লাইসেন্সে বলা রয়েছে, ‘বার্ষিক লাইসেন্স ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কমিশনকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি প্রদান করে নির্ধারিত তারিখের ৬০ দিন পর্যন্ত বকেয়া অর্থ প্রদান করা যেতে পারে। যদি নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে অর্থ প্রদান না করা হয়, তাহলে কমিশন লাইসেন্সের ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

আপত্তি কোথায় ?

গ্রামীণফোনের মুখপাত্র হোসেন সাদাত টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘টেলিকম লাইসেন্স ১৫ বছরের একটি প্রতিশ্রুতি। একপাক্ষিকভাবে লাইসেন্সের কোনো ধারা সংশোধন হলে তা ব্যবসাকে প্রভাবিত করে এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে যার ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এছাড়াও, টেলিকম আইনের প্রাসঙ্গিক বিধান অনুসারে, আইনে কোনো সংশোধনী আনতে হলে তা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্পৃক্ততায় অনুষ্ঠিত গঠনমূলক সংলাপের প্রেক্ষিতে হওয়া উচিত।’

‘যদিও আমরা লাইসেন্স সংশোধনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমাদের প্রত্যাশা, যেকোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সধারীদের সাথে প্রয়োজনীয় আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’ বলছিলেন তিনি।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘লাইসেন্সের কোনো সংশোধনী আনতে হলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হবে। এই সংশোধনী আমরা যে লাইসেন্সের উপর নির্ভর করে দেশে বিনিয়োগ করেছিলাম তা ভঙ্গ করে।

অন্যদিকে বাংলালিংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বলছেন একই কথা। তারা বলছেন, আলোচনার প্রয়োজন ছিলো। আর বর্তমানে করা কোনো পরিবর্তন কীভাবে বছরের পর বছর আগে হতে কার্যকর করা হতে পারে ?

কেন এই সংশোধনী এত গুরুত্বে ?

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের ১৯৯৭ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অডিট করেছে বিটিআরসি । এতে অপারেটরটির কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা অডিট আপত্তি বের হয়। এখান হতে ২ হাজার কোাটি টাকা আদায় করেছে বিটিআরসি।

রবিরও ১৯৯৭ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অডিট করা হয়েছে। এতে অপারেটরটির কাছে পাওনা দাবি ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।এরমধ্যে ১৩৮ কোটি টাকা পেয়েছে বিটিআরসি।

আর বাংলালিংকে ১৯৯৬ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অডিট করা হয়েছে। তাদের কাছে ৮২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি বিটিআরসির । বিটিআরসি এখনও কোনো টাকা পায়নি।

এখানে বাংলালিংকের কাছে মোট এই পাওনার মধ্যে ৪৩০ কোটি টাকার মতোই বিলম্ব ফি। জিপি ও রবির ক্ষেত্রেও বিলম্ব ফি ও তার উপর সুদ মিলে যে অর্থ দাঁড়িয়েছে তা মূল টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

জিপি, রবি ও বাংলালিংক তিনটি অপারেটরই বলছে, লাইসেন্সের বিদ্যমান ধারায় এতো বছরের লেট ফি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে বিটিআরসির এই বিপুল পাওনার বেশিরভাগই দাবিযোগ্য থাকে না।

নীতিনির্ধারকরা যা বলছেন ?

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার টেকশহর ডটমককে বলেন, ‘ওখানে বলা হয়েছে তারা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা না দেয় তাহলে পরবর্তীতে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে উইথ লেট ফি এটা নবায়ন করতে পারবে। এটার অর্থ এই নয় যে, ৬০ দিনের বেশি লেট ফি আদায় করা যাবে না। এরপর ক্লজে বলা আছে, বিটিআরসি উইল ডিসাইড, যে কী করা হবে। এখানে মিস ইন্টারপ্রিট করে তারা।’

‘বিটিআরসি সংশোধনীতে বিষয়টি স্পষ্টীকরণ করেছে শুধু’ উল্লেখ করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জাব্বার টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘লাইসেন্সে তো কোনো চেইঞ্জ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে যেন ভুল ব্যাখ্যা না করা হয় সেটি দেখা হচ্ছে।’

‘রাষ্ট্রের পাওনা আদায়ে সবরকম আইন ও নিয়ম অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এখানে কোনো ভ্রান্তির সুযোগ নেই।’ বলছিলেন মন্ত্রী।



from টেক শহর https://ift.tt/opTGQS6
Previous Post Next Post