চিপনির্মাতা এনভিডিয়া এখন এআই সুপারপাওয়ার

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: কম্পিউটার চিপ ডিজাইনার কোম্পানি এনভিডিয়ার শেয়ার গত সপ্তাহ ধরেই বেড়েছে। শেয়ারের এই উর্ধ্বগতির সুবাদে কোম্পানিটির মূল্যমান এক ট্রিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে। যা এনভিডিয়াকে টেক জায়ান্ট অ্যাপল, আমাজন, আলফাবেট এবং মাইক্রোসফটের মতো এক ট্রিলিয়ন ডলারের এলিট ক্লাবের কোম্পানিগুলোর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।

সম্প্রতি প্রান্তিককালীন প্রতিবেদনে এনভিডিয়া জানিয়েছে ‘বর্ধনশীল চাহিদা’ পূরণে চিপের উৎপাদন বাড়িয়েছে তারা। উল্লেখ্য, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সিস্টেমে ব্যবহৃত চিপ বাজারের আধিপত্য এখন এনভিডিয়ার।

গত নভেম্বরে মার্কিন কোম্পানি ওপেনএআইয়ের উদ্ভাবিত চ্যাটজিপিটি আসার পর থেকেই এআই নিয়ে আগ্রহ আকাশচুম্বি হয়ে উঠেছে। বক্তব্য দেয়া থেকে শুরু করে কম্পিউটার কোডিং এমনকি রান্নার বিষয়েও দারুন সাহায্য করতে সক্ষম চ্যাটজিপিটি এখন এআইয়ের একটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন। তবে শক্তিশালী কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ছাড়া এতোসব কোভাবেই সম্ভব হতো না। আর এআইয়ের জন্য এই বিশেষ কম্পিউটার চিপগুলো তৈরি করে থাকে এনভিডিয়া।

Techshohor Youtube

এনভিডিয়া সাধারনত গ্রাফিকস তৈরি বিশেষ করে কম্পিউটার গেমসের জন্য হার্ডওয়্যার তৈরি করে সুপরিচিত। বর্তমানে সব এআই এপ্লিকেশনেই এনভিডিয়ার তৈরি হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনারের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি এনালিস্ট অ্যালান প্রিয়েস্টলি বলেছেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নামক নতুন এই জিনিসটিকে সক্ষম করে তোলার এটি প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ খেলোয়ার।’ টেকইনসাইটের বিশ্লেষক ড্যান হাচেসন বলেছেন, পিসির ক্ষেত্রে যেমন ইন্টেল ঠিক তেমনি এআইয়ের জন্য এনভিডিয়া।

উল্লেখ্য, এনভিডিয়ার ১০ হাজার গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) এর সাথে মাইক্রোসফটের সুপারকম্পিউটারে সাথে একত্রিত হয়ে প্রশিক্ষিত হয়েছিল চ্যাটজিপিটি। এনভিডিয়ার এক্লিরেটেড কম্পিউটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মহা ব্যবস্থাটক ইয়ান বাক বলেছেন, ‘এটি অনেকগুলো সুপারকম্পিউটারের একটি যেগুলোর কিছু পরিচিত আবার কিছু পরিচিত নয়। যেগুলো এআইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কাজের উদ্দেশ্যে এনভিডিয়া জিপিইউর সাথে তৈরি করা হয়েছে।’

মেশিন লার্নিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিপিইউ’র বাজারের ৯৫ শতাংশই এনভিডিয়ার দখলে বলে সিবির এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে। ডাটা সেন্টারের সিস্টেম ডিজাইনের জন্য তৈরি এনভিডিয়ার প্রতিটি এআই চিপের দাম দশ হাজার ডলার। এর নতুন এবং আরো আধুনিক এআই চিপের দাম আরো বেশি পড়বে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এনভিডিয়া কিভাবে এআই বিপ্লবে মধ্যমণি হয়ে উঠলো। সংক্ষেপ বলতে হলে নিজম্ব প্রযুক্তির ওপর ভর করে রীতিমতো বাজি ধরেছিল কোম্পানিটি। ২০০৬ সালে এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহি জেনসেন হওয়াং কোম্পানির চিপকে প্রোগ্রামিং সক্ষম করে তোলেন। পরবর্তীতে এনভিডিয়া গেমিং ও অন্যান্য এপ্লিকেশনের জন্য উন্নত গ্রাফিকস তৈরির দিকে মনযোগ দেয়।

১৯৯৯ সালে কম্পিউটারের ইমেজ ডিসপ্লে বাড়াবে এমন জিপিইউ উদ্ভাবন করে এনভিডিয়া। জিপিইউ এক্সেল একসাথে অনেক ছোট ছোট কাজ করতে পারদর্শী । যেমন- স্ক্রিনে লাখ লাখ পিক্সেল নিয়ন্ত্রন করতে পারে এই জিপিইউ। ২০০৬ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জিপিইউর আরেকটি ব্যবহার আবিষ্কার করেন। তারা বলেন জিপিইউ খুব দ্রুত গণিতের কাজ করতে পারে যা সাধারন প্রসেসিং চিপগুলো পারে না । ঠিক এই মুহুর্তে এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহি হুয়াং এআই তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। জিপিইউকে প্রোগ্রামিং কাজে সক্ষম করে তোলতে একটি টুল তৈরির জন্য তিনি এনভিডিয়ার সম্পদ বিনিয়োগ করেন।

এই টুলটি এনভিডিয়ার কম্পিউটার চিপসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে কম্পিউটার গেমস যারা খেলেন তাদের জন্য এই সক্ষমতার প্রয়োজন হয় না। তবে গবেষকরা দেখতে পান গণনার জন্য এর উচ্চ সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানের যে আধুনিক এআই নিয়ে হইচই চলছে তার পেছনে এনভিডিয়ার তৈরি চিপের অবদান রয়েছে।

২০১২ সালে অ্যালেক্সনেট নামে একটি এআই আবিষ্কৃত হয় যা ছবিগুলোকে শ্রেণীকরন করতে পারে। এনভিডিয়ার মাত্র দুটি প্রোগ্রামেবল জিপিইউ ব্যবহার করে অ্যালেক্সনেটকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এই প্রশিক্ষণে সময় লেগেছিল মাত্র দুদিন। দেখা যায় জিপিইউ নিওরাল নেটওয়ার্ক প্রক্রিয়াকরন খুব দ্রুত করতে পারে। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের কাজের চাপ কমাতে এই জিপিইউগুলো কেনা শুরু করেন। এছাড়াও প্রযুক্তি ব্যবহা আরো সহজ করে তুলে এমন সফটওয়্যারও নির্মাণ করতে থাকে এনভিডিয়া। এক দশকে কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগের পর চ্যাটজিপিটির আবির্ভাব হলো। এই প্রযুক্তি মানুষের মতো করেই প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম।

২০২১ সালে টম টম ক্রুজের ডীপ ফেইক তৈরি করে আলোচনায় আসে এআই স্টার্ট আপ মেটাফিজিক। এই মডেলটি তৈরি ও প্রশিক্ষিত করতে এনভিডিয়ার কয়েকশ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছিল। কোম্পানিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহি টম গ্রাহাম বলেছেন, ‘আমরা যে কাজ করি সেখানে এনভিডিয়ার কোন বিকল্প নেই। ’ এনভিডিয়া আজ যে অবস্থানে রয়েছে তা নিশ্চিত বলে মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে থাকবে কিনা তা বলা মুষ্কিল। কারণ এখানে এএমডি এবং ইন্টেলের মতো প্রতিদ্ব›দ্বী যুক্ত হয়ে। সেন্ট্রল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) তৈরি করে সুপরিচিত হয়ে উঠা এই কোম্পানিদুটি এআই এপ্লিকেশনে ব্যবহার করা যায় এমন জিপিইউ তৈরি করছে।

সার্চের পাশাপাশি নির্দিষ্ট মেশিন লার্নিং কাজের জন্য টেনর প্রসেসিং ইউনিট (টিপিইউ) ব্যবহার করছে গুগল। এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য অ্যামাজনের রয়েছে কাস্টম বিল্ট চিপ।

অন্যদিকে এআই ব্যবহৃত জিপিইউর বিকল্প প্রযুক্তি নির্মাণে কাজ করছে সেরেব্রাস, সামুয়ানোভা সিস্টেমের মতো কোম্পানি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গ্রাফকোর ইন্টেলিজেন্স প্রসেসিং ইউনিটস (আইপিইউ) নামে এআই চিপ তৈরি করেছে। জিপিইউর তুলনায় এর গণনা শক্তি বেশি এবং তুলনামূলক কম দামি। গ্রাফকোরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা নাএজল তুন জানেন এনভিডিয়ার মতো জায়ান্ট কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করা সহজ নয়। তবে তিনি বিশ্বাস করেন এআই ক্রমে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জায়গা ছেড়ে বাণিজ্যিক পরিমন্ডলে প্রবেশ করবে।

বিবিসি/আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/5fMud9X
Previous Post Next Post