আল-আমীন দেওয়ান : টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলোর বড় একটি অংশই সরকারের সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল বা এসওএফ ফান্ডের বাইরে ছিল।
এখন হতে এসব কোম্পানি যেন এই তহবিলে টাকা দেয় সে ব্যবস্থা করেছে বিটিআরসি। তারা কোম্পানিগুলোর ব্যবসার খাতভিত্তিক গাইডলাইন-নির্দেশিকায় সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কোম্পানিগুলোকে এই তহবিলে বার্ষিক নিরীক্ষিত মোট রাজস্বের ১ শতাংশ জমা দিতে হবে। অবশ্য মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এই তহবিলে টাকা দিয়ে আসছে।
ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইপিটিএসপি), ইন্টারন্যাশনাল টেলিস্ট্রেরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি), ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিসেস (ভিটিএস), ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেসের লাইসেন্সিং গাইডলাইনে পরিবর্তন এনেছে বিটিআরসি।
এসব গাইডলাইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বিটিআরসি। যা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পূর্বানুমোদনের জন্য দিয়েছে কমিশন।
বিটিআরসি বলছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ধারা ২১ (ক) অনুযায়ী সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল গঠনের বিষয় রয়েছে। সে অনুযায়ী কমিশনের সব গাইডলাইন, নির্দেশিকায় এই তহবিল অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আইন অনুয়ায়ী গাইডলাইনে এই পরবির্তন আনতে লাইসেন্সিদের মতামতও নেয়া হয়েছে।
যাদের আপত্তি, যেজন্য আপত্তি ?
এসওএফ ফান্ডে টাকা দেয়া নিয়ে নারাজি জানানো কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনেকের মতামতে দেখা যাচ্ছে তারা সেবার দাম বাড়বে, ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ, বৈশ্বিক সংকট, সুলভে জনগণের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছানোর কাজ বাধাগ্রস্থ হবে-ইত্যাদি কারণ বলছেন।
ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভুঁইয়া টেকশহর ডটকমকে বলেন, আমরা এই বিষয়ে নারাজি জানিয়েছিলাম। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার দাম বাড়বে।
‘আমরা এখনও এসওএফ তহবিলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো চিঠি বা নির্দেশনা পাইনি। তবে যদি এমনটা হয় সেখানে আমাদের আপত্তি থাকবে’ বলছিলেন তিনি।
আইআইজি কোম্পানিগুলোর সংগঠন আইআইজি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বিটিআরসিকে জানিয়েছে, ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে দেশব্যাপী পপ তৈরিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে তাদের অনেক বিনিয়োগ করতে হয়। তাই তারা এই তহবিলে অন্তর্ভুক্তি চান না।
আইপিটিএসপি, এনটিটিএন এবং আইটিসি লাইসেন্সধারী কোম্পানি বিটিসিএল বলছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বস্তরের জনগণের কাছে সুলভে টেলিযোগাযোগ সেবা এবং ইন্টারনেট পৌঁছানোর স্বার্থে এই এসওএফ তহবিলে তাদের অন্তর্ভুক্তি ঠিক হবে না। এছাড়া এতে এনটিটিএন সেবার মূল্য বাড়বে যার প্রভাব গ্রাহকের উপর পড়বে।
ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিসেস (ভিটিএস) কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বর্তমান আর্থিক সংকট ও গ্রাহক কমে যাওয়ার ধারা, রাজস্ব কমা এবং জীবযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এই তহবিলে টাকা দেয়া তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। তাই এই তহবিলে টাকা দিতে তাদের নারাজি রয়েছে। যদিও ভিটিএসের দুটি কোম্পানি টাকা দিতে সম্মতি জানিয়েছে।
এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাহন, বিটিসিএল, পিজিসিবিএল, ফাইবার অ্যাট হোম বলছে, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সংকট, বিপুল বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদী রিটার্ন এবং নন-এনটিটিএন অপারেটর এই ব্যবসা চালানোর কারণে এই তহবিলে টাকা দেয়া তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের এবং প্রায় অসম্ভব। তাই তারা তাদের এসওএফ তহবিলে অন্তর্ভুক্তিতে সহমত নন।
আইটিসি কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস ও বিটিসিএল বলছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বস্তরের জনগণের কাছে সুলভে টেলিযোগাযোগ সেবা এবং ইন্টারনেট পৌঁছানোর স্বার্থে এই তহবিলে যুক্ত হতে চান না তারা। বিটিআরসিকে তারা তাদের দ্বিমতের কথা জানিয়েছেন।
নীতিনির্ধারকরা যা বলছেন :
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটমকে জানান, জনসাধারণের মধ্যে ইন্টারনেট সহজলভ্য এবং সকল মানুষকে ডিজিটাল সংযোগের আওতায় এনে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের দ্বীপ, চরাঞ্চল, পাহাড় ও হাওর অঞ্চলসহ দুর্গম এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন, দেশের অনগ্রসর এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৬৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল শিক্ষা চালুকরণ, দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল ডাকঘর স্থাপনসহ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত করতে এই তহবিলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
‘এসওএফ ফান্ডে অংশগ্রহণ ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব, এটা আইনেও আছে। তাই রাষ্ট্রের যেকোনো পাওনা না দেয়ার সুযোগ নেই’ বলছিলেন মন্ত্রী।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার টেকশহর ডটকমকে জানান, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের টাকা জনস্বার্থে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য খরচ করে প্রকল্প নিচ্ছি।’
‘এই তহবিলের প্রাপ্য আদায়ের ক্ষেত্রে যতো চ্যালেঞ্জ থাকুক, বাধা থাকুক, অসহযোগিতা থাকুক এটা করার জন্য অনড় ছিলাম যে, এটা করবোই। আর আইনে আছে এটা দিতে হবে, রুলে আছে এটা দিতে হবে, সেজন্যই এটা করতে পেরেছি’ বলছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
from টেক শহর https://ift.tt/ru2ycFG