অডিট প্রতিবেদন চুড়ান্ত, বাংলালিংকের ফাঁকি ৮২৩ কোটি টাকা

আল-আমীন দেওয়ান : বাংলালিংকের অডিট প্রতিবেদন চুড়ান্ত করা হয়েছে।

এতে ৮২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি বিটিআরসির। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি শিগগির অপারেটরটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পাওনা দাবি পাঠাবে।

মোট এই পাওনার ৪৩০ কোটি টাকাই বিলম্ব ফি। ২৩৪ কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স ও ফি এবং ১৫৯ কোটি টাকার মতো রয়েছে রেভিউনিউ শেয়ারিং, হ্যান্ডসেট রয়্যালিটি, অ্যাকসেস ফ্রিকোয়েন্সি পেইমেন্ট, মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি পেইমেন্ট, পাওয়ার আউটপুট চার্জ, লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন পাওনা।

Techshohor Youtube

বাংলালিংকে ১৯৯৬ সাল হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অডিট করা হয়েছে।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান টেকশহর ডটকমকে জানান, ‘তারা এখনও অডিট আপত্তির পাওনা দাবি বিষয়ে বিটিআরসির কোনো চিঠি পাননি।’

তবে অপারেটরটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, বিটিআরসির সঙ্গে অডিট নিয়ে একাধিক আলোচনায় তাদের মূল আপত্তির জায়গা ছিলো বিলম্ব ফি। কারণ তারা বিলম্বের জন্য নিজেদের দায়ী মনে করছেন না। আর ভ্যাটের বিষয়টি তো আদালতে রয়েছে।

‘বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্টদের যেসব পাওনা তা নিয়মিতভাবে বাংলালিংক দিয়ে আসছে। আমরা চাই নিয়মিত অডিট হোক। বিটিআরসি যদি নিয়মিত অডিট করতো তাহলে নিয়মিতভাবেই আপত্তির জায়গাগুলো মিমাংসা হয়ে যেতো, সেখানে দেনা-পাওনার কোনো বিলম্ব থাকতো না। তাই এই বিলম্ব ফির বিষয়টি তারা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে বিবেচনার আশা করছেন এবং তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে গুরুত্ব দিতে চান’ বলছিলেন ওই কর্মকর্তারা।

বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ টেকশহর ডটমককে বলেন, সরকারের যা পাওনা তা আদায়ে বিটিআরসি সচেষ্ট।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার টেকশহর ডটকমকে বলেন, গৃহীত অডিটের চুড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পাওনা আদায়ে বাংলালিংককে শিগগির চিঠি দেয়া হবে।

ডাও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলছেন, ‘ আমরা দেখি রাষ্ট্রের পাওনার ক্ষেত্রে নানা অজুহাত দেখানো হয়। নানাভাবে বিলম্ব করা হয়, কীভাবে কমানো-এসব। দেন-দরবার-তদবির হতে শুরু করে এমন কোনো চাপ নেই যে, তারা দেয় না। আগের দুই অপারেটরের ক্ষেত্রেও অডিটের টাকা যখন আদায় করি তখন কল্পনার বাইরে তারা চাপ দিয়েছে।’

‘পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের দিক হতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা নেয়া হবে। সরকারি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চুল পরিমাণ ছাড় দেইনি, দেবোও না’ বলছিলেন মন্ত্রী।

বাংলালিংক আলোচনার সুযোগ চায় এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসায় মন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার দরজা সবসময় খোলা, আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু রাষ্ট্রের পাওনার ন্যায্যতার প্রশ্নে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

অডিটের শুরু হতে শেষ :

অডিটর নিয়োগের পর ১ বছর ৯ মাস লেগেছে এই অডিট করা এবং প্রতিবেদন চুড়ান্ত করতে। মেসার্স মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোং এবং এএনবি সলিউশনস এর জয়েন্ট ভেঞ্চার বাংলালিংকের অডিট করেছে।

অডিটর নিয়োগের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিলো ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট। বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এই অডিট শেষ করার কথা ছিলো ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এরপর চার দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঠেকে।

বাংলালিংকের এই অডিট করতে মসিহ মুহিত হক এন্ড কোম্পানিকে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বিটিআরসিকে।

কোম্পানিটি ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথম ইনসেপশন প্রতিবেদন দেয়, এরপর এটির সংশোধিত প্রতিবেদন আসে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর। প্রথম প্রগ্রেস প্রতিবেদন দেয় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর যার সংশোধিত প্রতিবেদন আসে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।

দ্বিতীয় প্রগ্রেস প্রতিবেদন দেয় ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় প্রগ্রেস প্রতিবেদন ২৭ মার্চ, চতুর্থ প্রতিবেদন ২০ জুন, পঞ্চম ২৯ সেপ্টেম্বর। এরপর ড্রাফট রিপোর্ট আসে ৬ অক্টোবর, যার তিনটি সংশোধন প্রতিবেদন দেয়া হয় যথাক্রমে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি, ১০ জানুয়ারি এবং ১৭ জানুয়ারি।

এরপর ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি চুড়ান্ত খসড়া রিপোর্টে চুড়ান্ত মতামতের জন্য বাংলালিংকের কাছে অডিটের বিস্তারিত পাঠানো হয়। বাংলালিংক মতামতের জন্য বাড়তি সময় চায় এবং বাড়তি সময়ের শেষ দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি মতামত দাখিল করে। এরপর আরও একটি মতামত দেয় অপারেটরটি। পরে এসব মতামত নিয়ে ১৩ মার্চ অডিট কোম্পানি বিস্তারিত পর্যালোচনা জানায় বিটিআরসিকে। বিটিআরসি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা সভা শেষে ১১ এপ্রিল অডিটর-বাংলালিংকসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে চুড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করে।

বিটিআরসি অডিটরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়, অডিটর-বাংলালিংকসহ ত্রিপক্ষীয় এবং অভ্যন্তরীণ সবমিলে ২৮ টি বৈঠক করেছে।

মোবাইল অপারেটরদের অডিটচিত্র :

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের ১৯৯৭ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অডিট করেছে বিটিআরসি । এতে অপারেটরটির কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা অডিট আপত্তি বের হয়। এখান হতে ২ হাজার কোাটি টাকা আদায় করেছে বিটিআরসি।

রবিরও ১৯৯৭ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অডিট করা হয়েছে। এতে অপারেটরটির কাছে পাওনা দাবি ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।অপারেটর দুটিই এই অডিট আপত্তির পাওনা দাবি নিয়ে নানামুখী চাপ তৈরিসহ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলো।

এয়ারটেলে অডিট করার প্রক্রিয়া চলমান। টেলিটকের এখনও কোনো অডিট করা হয়নি।

এদিকে নতুন করে আবার অডিটের উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি। এখন গ্রামীণফোন-রবির অডিট ছাড়া সময় রয়েছে ৯ বছর করে। বাংলালিংক অডিট ছাড়া ৪ বছর এবং টেলিটক ১৯ বছর।



from টেক শহর https://ift.tt/vT5ZxyV
Previous Post Next Post