আধুনিক যুগের বিয়ে হয়ে উঠছে প্রযুক্তিনির্ভর

টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: বিয়েতে বর-কনের মধ্যে আংটি বদল অতি সুপরিচিত পর্ব। সাধারনত স্বর্ণ বা হীরের মতো দামি কোন ধাতু দিয়ে তৈরি হয় এসব আংটি। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে বিয়ের অংটিতেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। বিয়েতে এখন দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে স্মার্ট রিং। পরিধানযোগ্য এই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসটি স্মার্টওয়াচের মতোই কাজ করে। এটি প্রযুক্তির দ্রুত বর্ধনশীল একটি খাত হয়ে উঠেছে। যার সুবাদে প্রতি বছর স্মার্টরিংয়ের বিক্রি বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর স্মার্টরিংয়ের বৈশ্বিক বিক্রি বেড়েছে ২১ শতাংশ। শুধু আংটি নয় বিয়ের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলতে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে অনেক।

কিছুদিন আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের জিরি এবং ওন্ড্রেজ। বিয়েতে তারা নিজেদের মধ্যে স্মার্টরিং বদল করেছেন। আংটির মাধ্যমে তারা একে অন্যের হৃদস্পন্দন অনুভব করেছেন। আংটিদুটি ব্লুটুথের সাহায্যে একটি অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। অ্যাপটির মাধ্যমে দুটি রিংয়ের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে দেখা গিয়েছে বিয়ের সময় জিরি যতবার তার বিয়ের আংটিতে চাপ দিয়েছেন ততবার তিনি ওন্ড্রেজের হৃদস্পন্দন অনুভব করেছেন। শুধু তাই নয় আংটিতে লাল লাইনের মতো করে হৃদস্পদন দেখা যায়। তাদের মোবাইলে যতক্ষণ ইন্টারনেট সংযোগ ছিলো ততক্ষণ তারা উভয়ের হৃদস্পন্দন অনুভব করেছেন। আর ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকলে সর্বশেষ হৃদস্পন্দনটি রেকর্ড হয়ে থেকেছে।

জিরি বলেছেন, ‘আমরা কখনোই স্বর্ণ এবং হীরের আংটি চাইনি। আমরা ভিন্ন কিছু চেয়েছি। আর তাই স্মার্টরিংয়ের এই আইডিয়াটি পছন্দ করেছি। ’

Techshohor Youtube

এইচবি রিং নামের রিচার্জএবল রিংটি তৈরি করেছে চেক প্রজাতন্ত্রের কোম্পানি দ্য টাচ। যদিও ২০১৬ সালে বাজারে প্রথম প্রথম স্মার্টরিংটি সাড়া ফেলতে পারে নি। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপিই স্মার্টরিংয়ের কদর ও বিক্রি বেড়েছে। এ বছর আরো একটি প্রযুক্তিনির্ভর অংলকার তৈরি করেছে কোম্পানিটি। টাচ লকেট নামের অংলকারটি নেকলেসের সাথে ব্যবহার করতে হয়। এখানে স্মার্টরিংয়ের মতো একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

বাগদান হয়ে যাওয়া দম্পতিদের টার্গেট করে এ পণ্যটি তৈরি করা হয়েছে; যারা গতানুগতিক বিয়ের আংটি ছাড়তে চান না কিন্তুএকে অন্যের হৃদস্পন্দন অনুভব করতে ইচ্ছুক।

যুক্তরাজ্যের ওয়েডিং প্লানিং ওয়েবসাইট হিচড ডট কো ডট ইউকের প্রধান সম্পাদক জোয়ে ব্রুক বলেছেন, ‘মানুষের জীবন এখন অনেক বেশি স্মার্টফোন নির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে ওয়েডিং টেক প্রযুক্তিও বেড়ে চলেছে।’

যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ দম্পতিই জানিয়েছে বিয়ের সময় অতিথিদের দাওয়াত দিতে তারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেছেন। আর দম্পতিদের ৬০ শতাংশই নিজেদের বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন।

অনেকে এখন বিয়ের অঙ্গীকারনামা অথবা বক্তব্য লেখার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্য নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েডিং প্ল্যানিং ওয়েবসাইট জয় সম্প্রতি একটি এআই টুল উন্মোচন করেছে যার মাধ্যমে এ ধরনের অঙ্গীকারনামা লেখা যায়। ‘ওয়েডিং রাইটারস বøক অ্যাসিসট্যান্ট’ নামের এই এআইটি প্রযুক্তি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

জয় এর সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহি ভিশাল জোশি বলেছেন, অঙ্গীকারনামা অথবা বক্তব্য লিখে সময় নষ্ট করার পরিবর্তে এই এআই টুল জীবনকে আরো সহজ করে দিবে।

করোনা ভাইরাস মহামারীরর সময় প্রযুক্তিভিত্তিক বিয়ের আরো প্রসার হয়েছে। সেসময় জুমের মাধ্যমে বিয়ে হয়েছে অথবা অতিথিদের সাথে লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনন্দ ভাগ করে নেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের বিধিনিষেধ উঠে গেলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে উঠছে আরো প্রযুক্তি নির্ভর। কাগজে তৈরি বিয়ের কার্ডের পরিবর্তনে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াত দেয়ার সুবাদে খরচ কমে আসছে। একে পরিবেশবান্ধব হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

লন্ডনের একজন ওয়েডিং প্ল্যানার রোহিতা পাবলা বলেছেন, ‘এটি একদিকে যেমন ব্যয় সাশ্রয়ি তেমনি অন্যদিকে পরিবেশবান্ধবও। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মতো জায়গায় দেখা গিয়েছে অনেক দম্পতি বিয়েতে প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও প্রথাগত নিয়ম-কানুনগুলো রাখতে পছন্দ করেন।’

বিবিসি/আরএপি



from টেক শহর https://ift.tt/qcaXi9A
Previous Post Next Post