রেডিয়েশনের গুজবে মিলছে না টাওয়ার বসানোর জায়গা

টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : রেডিয়েশন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা, অপপ্রচার-গুজবের কারণে প্রয়োজনীয় মোবাইল টাওয়ার বসানোর জায়গা মিলছে না।

সরকারি-বেসরকারি উভয় স্থানেই টাওয়ার বসাতে গিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটর ও টাওয়ার কোম্পানিগুলো। উল্টো টাওয়ার সরিয়েও নিতে হচ্ছে। ফলে মানসম্মত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে পারছে না তারা।

শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক গোলটেবিলে এসব আলোচনা উঠে আসে।

Techshohor Youtube

গোলটেবিলে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার ।

টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আলোচনায় অংশ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল আলম, বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এহসানুল কবিরসহ মোবাইল খাত ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এতে স্বাগত বক্তব্য দেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, দেশে অপপ্রচার চালানো হয় যে, টাওয়ার হতে এতো মাত্রায় রেডিয়েশন হয় তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। রেডিয়েশন মাপার বা দেখার সক্ষমতা বিটিআরসির আছে। এ সম্পর্কিত আধুনিক যন্ত্রপাতিও বিটিআরসির পর্যাপ্ত আছে। যা দিয়ে দেশে এই রেডিয়েশন মাপা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো টাওয়ারের ক্ষেত্রে রেডিয়েশনের যে সহনশীলতার মাত্রা রয়েছে তার উপরে যায়নি ।

তিনি বলেন, এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা দরকার। সরকারি-বেসরকারি অনেক দপ্তরক ও ভবন মালিকদের বোঝাতে হচ্ছে যে মোবাইল টাওয়ারে মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু নেই ।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বিটিআরসির উপ-পরিচালক ড: শামসুজ্জোহা বলেন, রেডিয়েশন দুই প্রকার – আয়োনাইজিং এবং নন-আয়োনাইজিং। এরমধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যেমন পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এরা শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। অপরদিকে মোবাইল রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং। এর শক্তি খুব কম, ফলে এর কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

‘মোবাইল টাওয়ারে ব্যবহার করা যন্ত্রপাতির ইএমএফ রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে এবং জরিপে দেখা গেছে যে দেশের মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে আছে।  ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, সুন্দরবন, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, জামালপুর ইত্যাদি অনেক এলাকায় জরিপ হয়েছে এবং এ পর্যন্ত কোথাও নির্ধারিত সীমার বেশি রেডিয়েশন নেই’ জানান তিনি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন,  টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে। জরিপ করতে গিয়ে কয়েকটি টাওয়ারের ওপরে পাখির বাসা দেখেছেন তারা। পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেক ভবনের ছাদে বাগান করা হয়েছে এবং তাতে খুব ভালো সবজি ফলন হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, রাজধানীর অন্তত তিনশটিরও বেশি স্থানে মোবাইল সাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না যেগুলো জরুরি। এই ভীতি কাটিয়ে উঠানোর জন্য সচেতনতা বাড়ানো দরকার। উচ্চমানের মোবাইল সেবা চাইব কিন্তু সাইট বসাতে দেয়া হচ্ছে না।

উন্নতমানের সেবা প্রাপ্তির জন্য বক্তারা মোবাইল সাইট বিস্তারে সহযোগিতা করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। বক্তারা আরও বলেন যে অনেকেই অবৈধভাবে মোবাইল নেটওয়ার্কে জ্যামার, রিপিটার, বুস্টার লাগাচ্ছেন। এসব স্থাপন করা যাবে না। এগুলো অবৈধ। এসবের কারণেও নেটওয়ার্কের ক্ষতি হচ্ছে। গ্রাহকেরা নিজেরাই ঠিকমত সেবা পাচ্ছেন না। অপারেটরদের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা তরঙ্গ ব্যবহারে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

এই গোলটেবিল আলোচনায় আরও অংশ নেন মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি এফেয়ারস অফিসার তাইমুর রহমান, রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ারস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত, হেড অফ নেটওয়ার্ক সলিউশন্স মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং এরিকশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম, নকিয়া বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড আরিফ ইসলাম, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মার্কেটিং ম্যানেজার এস এম নাজমুল হাসান, টাওয়ার কোম্পানি ইডটকোর হেড অফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ারস মাসুদা হোসেন, এমটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবঃ)।



from টেক শহর https://ift.tt/hB8Pact
Previous Post Next Post