এআইয়ের সুবাদে কাজের ধরনে বিশাল পরিবর্তন আসছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির কল্যাণে কাজ করার পদ্ধতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনি ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্টকে মিটিংয়ের কোন নোট কপি করে দিতে বলতে পারবেন। এছাড়াও খুব দ্রুত লম্বা ইমেইল থ্রেডের সারাংশ তৈরি করা, এক্সেলে নির্দিষ্ট কোন চার্ট তৈরি করে দেয়ার নির্দেশ এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওয়ার্ড ডকুমেন্টকে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে রূপান্তর করে দিতে পারবে এই এআই অ্যাসিসটেন্ট। আর এ সবকিছুই ঘটবে মাইক্রোসফটের ৩৬৫ প্লাটফর্মে।

গত সপ্তাহ ধরে দ্রুত  বিকশিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আরো সামনে এগুতে দেখা গিয়েছে। শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট ও গুগল সিগনেচার প্রোডাক্টিভিটি টুলগুলোর জন্য নতুন এআই ফিচার উন্মোচন করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই তাদের ভাইরাল চ্যাটবটের আরো উন্নত সংস্করন চ্যাটজিপিটি-৪ চালু করেছে।

এতোদিন এআই টুলগুলো পর্দার আড়াল থেকে অনেক কাজ করেছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অনেকটা হঠাৎ করেই কর্মক্ষেত্রে শক্তিশালী ও দৃশ্যমান টুল হিসেবে এআই প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। যেমন-গুগলের নতুন কিছু ফিচার ডকসে ‘ব্রেনস্ট্রম’ ও ‘প্রুফরীডের’ মতো লিখিত কাজে সহায়তা করবে। এছাড়াও যদি আপনার কর্মক্ষেত্রে জনপ্রিয় চ্যাট প্লাটফর্ম স্ল্যাক ব্যবহার করা হয় তাহলে এর চ্যাটজিপিটি টুল দিয়ে সহকর্মীদের সাথে কথা বলতে পারবেন। এছাড়াও এই চ্যাটবটটিকে নতুন ম্যাসেজ লেখার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি আলোচনার সারাংশ তৈরি করে দিতে পারবেন।

এআই প্রযুক্তির প্রবর্তনের জন্য ওপেনএআই, মাইক্রোসফট ও গুগল অগ্রনী ভূমিকা রাখছে। তবে এই কোম্পানিগুলো একা নয় আইবিএম, আমাজ, বাইদু ও টেনসেন্টের মতো কোম্পানিগুলোও এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এছাড়া এআই রাইটিং অ্যাসিসটেন্ট ও ইমেজ জেনারেটর তৈরি করছে এমন স্টার্টআপের সংখ্যাও বাড়ছে। কোম্পানিগুলো বলছে এআই আমাদেরকে আরো উৎপাদনসক্ষম করে তুলবে এবং কাজের অহেতুক বোঝা কমাবে।

মাইক্রোসফটের সিইও সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এআই প্রযুক্তির এই পরবর্তী প্রজন্ম উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধির একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও কর্মক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত পরিশ্রম দূর করে দিবে। পুনরায় সৃষ্টির আনন্দ আবিষ্কার করতে আমাদের মুক্ত করে দিবে। ’

তবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে কিনা পরিস্কার নয়। যেমন-এআই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে লেখা ইমেইলগুলো যে পাঠাবে তার উৎপাদনশীলতা বাড়বে তবে কম্পিউটারে তৈরি প্রয়োজনীয় বার্তার তুলনায় দীর্ঘ অনেক বার্তা জমে যাওয়ায় এটি প্রাপকের সক্ষমতা হ্রাস করবে। এছাড়াও সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সবার কাছেই বিকল্প চ্যাটবট রয়েছে তার মানে এই নয় যে সবাই এই এআই ব্যবহার করবে।

চারমাস আগে ওপেনএআই যখন সীমিত পরিসরে চ্যাটজিপিটির সংস্করন বের করে তখন থেকেই এআই পণ্যগুলোর নতুন ঢেউ খেলে যায়। মানুষের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানানো, নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচনা লেখার মতো কাজ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। চলতি সপ্তাহে চ্যাটজিপিটির আরো উন্নত সংস্করন জিপিটি-৪ বের করা হয়। এটি পূর্বেরটার মতো ভুল করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আইনের খসড়া তৈরি, হাতে আঁকা কোন স্কেচ থেকে একটি কার্যকরী ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে। জিপিটি-৪ একটি বৃহৎ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল।

অন্যদিকে মাইক্রোসফটও ‘কো-পাইলট’ নামে নতুন ফিচার এনেছে। এই ফিচার মাইক্রোসফট ৩৬৫ কাজ করা বিভিন্ন ডকুমেন্ট সম্পাদনা, সারাংশ লেখা, তৈরি করতে পারে। এছাড়া বিজনেস চ্যাট নামের একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পে সব ধরনের ডকুমেন্টের সারসংক্ষেপ তৈরি করে দেয়।  এরপর একটি ইমেইল তৈরি করে আপডেটসহ তাদের টীমের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

তবে এআই ক্ষমতাসম্পন্ন টুলগুলো কাজ কতটুকু পরিবর্তন করবে তা নির্ভর করে অ্যাপ্লিকেশনের ওপর। যেমন-একটি ওয়ার্ড প্রসেসিং অ্যাপ আউটলাইন, ড্রাফট তৈরি করতে পারে, স্লাইডশো প্রোগ্রাম ডিজাইন ও কনটেন্ট তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। একটি স্প্রেডশিট অ্যাপ আরো ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ ও ডাটা-চালিত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। 

এআই সলিউশন কোম্পানি এনবলের সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা অরিজিত সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, যে কোন বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের সমস্যা হচ্ছে এটি ব্যবহারকারীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে এবং ব্যবহারকারীর বক্তব্যের ভিত্তি গ্রহন করে। তিনি আরো বলেন, ‘যদি কোন বিষয়ে কেউ কোন বিষয় নিয়ে পরচর্চা শুরু করে তাহলে এআই তা গ্রহন করে এবং কনটেন্ট বানানো শুরু করে দেয়। এটি আন্তঃব্যাক্তিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে অফিসে বুলিংয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান বলেন এই সিস্টেমের পেছনে থাকা প্রযুক্তি এখনো ত্রুটিপূর্ণ, সীমিত।’

গার্টনার রিসার্চের  অরুন চন্দ্রশেখরন বলেছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রযুক্তিগুলোর ভালো দিক ও সীমাবদ্ধতাগুলো বিষয়ে ব্যবহারকারীদেরকে জানাতে হবে। এই প্রযুক্তির ওপর অন্ধ বিশ্বাস রাখা যেমন বিপজ্জনক তেমনি এর কার্যকারীতার ওপর পুরোপুরি আস্থা না থাকাও ক্ষতিকর। এআইগুলো যেমন সমস্যার সমাধান আনতে পারে তেমনি অনেক সময় ভুল তথ্যও উপস্থাপন করতে পারে। এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি রাখতে হবে।

Previous Post Next Post